স্বতন্ত্র পরিদপ্তর গঠনসহ ছয় দফা দাবিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এবং ফার্মেসি শিক্ষার্থীরা।
সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪, বেলা ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত এই বিক্ষোভ চলে। বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভবনের বাইরে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রবেশ করতে পারেননি, এবং ভবনের ভেতর থেকেও কেউ বাইরে যেতে পারেননি।
বিক্ষোভের মূল দাবি ছিল স্বাস্থ্য খাতে বৈষম্য দূর করা এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসি শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা। আন্দোলনকারীরা এই মুহূর্তে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ দাবি তুলেছেন, যার মধ্যে অন্যতম হলো স্বতন্ত্র পরিদপ্তর গঠন, ডিপ্লোমাধারীদের দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা প্রদান, এবং গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের জন্য নবম গ্রেডের পদ সৃষ্টি। তারা আরও দাবি করেছেন, চাকরিজীবীদের পদোন্নতির নিয়ম আনুপাতিক হারে অব্যাহত রাখতে হবে, নিয়োগবিধিতে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা এবং ঢাকা আইএইচটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা।
এছাড়া আন্দোলনকারীরা বলেন, আইএইচটিগুলোর জন্য মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট শিক্ষকদের স্বতন্ত্র ক্যারিয়ার প্ল্যান গঠন এবং বিদ্যমান নিয়োগ বিধি ও অসংগতিপূর্ণ গ্রেড সংশোধন করাও জরুরি। আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবির মধ্যে রয়েছে, মেডিকেল টেকনোলজি কাউন্সিল গঠন করে পেশাদার লাইসেন্স প্রদান, ডিপ্লোমা মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড গঠন, প্রাইভেট সার্ভিস নীতিমালা তৈরি এবং সব অনুষদের বিএসসি, এমএসসি ও বি-ফার্ম কোর্স চালু করার দাবিও তোলা হয়। বিক্ষোভকারীরা সরকারের কাছ থেকে স্কলারশিপসহ প্রশিক্ষণ ভাতা চালু করার দাবি জানান।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিএসসি উত্তীর্ণ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আবু ইসা জানান, “ডিপ্লোমা ৩ বছর এবং বিএসসি ৪ বছর এই সাত বছরের কোর্স শেষ করতে আমার লেগেছে ১১ বছর। এই শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য আমার জীবনের মূল্যবান ৪ বছর নষ্ট হয়েছে। এজন্য এই সিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে।” একই সঙ্গে অন্য এক শিক্ষার্থী, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ইয়াকুব আলী খান বলেন, “৭০ হাজার সদস্য নিয়ে আমাদের পরিবার। কিন্তু আমাদের নিয়োগসহ সব কাজ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তর ডাক্তারদের নিয়ে কাজ করতেই হিমশিম খাচ্ছে, তারাই নানা সমস্যায় জর্জরিত, এজন্য আমাদের কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে করতে পারছেন না। এজন্য আমরা আলাদা পরিদপ্তর চাই।”
বিক্ষোভের এক পর্যায়ে, দুপুর ১টার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করেন যে, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের বৈঠকের ব্যবস্থা করা হবে এবং আন্দোলনের বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সন্ধ্যার দিকে, বেলা ২টার দিকে আন্দোলনকারীরা স্বাস্থ্য ৬ দাবিতে স্বাস্থ্য মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের অধিদপ্তরের দুটি ফটকের তালা খুলে দেন এবং অবরোধ কর্মসূচি শেষ করেন।
এই বিক্ষোভের মাধ্যমে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসি শিক্ষার্থীরা তাদের দীর্ঘদিনের অসন্তোষ এবং অধিকার সংক্রান্ত দাবিগুলোর প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের দাবি, যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে তারা আরও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবেন।