শিম সম্পর্কে কতটা জানেন?

শিম একটি জনপ্রিয় শীতকালীন সবজি যা পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে পরিচিত।

শিমের বিভিন্ন প্রকার উপকারিতা রয়েছে, যা স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শিমে প্রোটিন, আঁশ, ভিটামিন (বিশেষত ভিটামিন এ, সি, কে) এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ যেমন আয়রন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, এবং ফোলেট রয়েছে।শিমে উপস্থিত ডায়েটারি ফাইবার হজমপ্রক্রিয়া উন্নত করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।শিম কম ক্যালোরি এবং উচ্চ আঁশযুক্ত হওয়ায় এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে। ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।শিমে থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি কোলেস্টেরল লেভেল কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।শিমের জটিল কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবার রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।শিমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়।শিমে থাকা ভিটামিন এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং বয়সজনিত বলিরেখা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।শিমে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা হাড় মজবুত রাখতে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।শিম আয়রনের একটি ভালো উৎস, যা রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং শরীরকে শক্তি যোগায়।শিমে থাকা ফাইটোকেমিক্যাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।শিম রান্না করে, সেদ্ধ করে বা সালাদে ব্যবহার করা যায়। এটি পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে সবার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

যদিও শিম একটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্যকর সবজি, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি অপকারিতার কারণ হতে পারে।

শিমে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা অতিরিক্ত খেলে গ্যাস, পেটফাঁপা এবং হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।কাঁচা শিমে কিছু প্রাকৃতিক টক্সিন (যেমন লেকটিন) থাকতে পারে, যা সঠিকভাবে রান্না না করলে পেটের সমস্যা বা বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।কিছু লোক শিম বা এর প্রোটিন উপাদানগুলোর প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে, যার ফলে চুলকানি, ফোলাভাব বা গুরুতর অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া (এনাফাইল্যাক্সিস) হতে পারে।শিমে উপস্থিত অলিগোস্যাকারাইড নামক একটি উপাদান হজমে সমস্যার কারণে অতিরিক্ত গ্যাস উৎপন্ন করতে পারে।যদিও শিম রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, তবে অতিরিক্ত খেলে বা সঠিক পরিমাণে না খেলে এটি রক্তের শর্করার মাত্রায় প্রভাব ফেলতে পারে।শিমে পটাসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। কিডনি ফাংশন কম থাকলে অতিরিক্ত পটাসিয়াম শরীরে জমে গিয়ে কিডনি রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।শিমে অক্সালেট নামক একটি যৌগ থাকে, যা বেশি পরিমাণে খাওয়া হলে কিডনিতে পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।কিছু প্রকার শিমে গোয়াইট্রোজেনিক উপাদান থাকতে পারে, যা অতিরিক্ত খেলে থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।শিমে প্রোটিন বেশি থাকায় কিছু ক্ষেত্রে এটি অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড উৎপন্ন করতে পারে, যা গেঁটেবাতের সমস্যায় ভুগতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিকর।

পরামর্শ:

  • শিম সঠিকভাবে রান্না করে খাওয়া উচিত।
  • যদি অ্যালার্জি বা কোনো বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, তবে শিম খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
  • সংযম বজায় রেখে শিম খেলে এর উপকারিতা বেশি এবং অপকারিতা কম।