ডা. মং উষা থোয়াই, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক:
ডেঙ্গু জ্বর একটি গুরুতর রোগ হতে পারে এবং এর উপসর্গ ও জটিলতা সম্পর্কে সচেতন থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে উল্লেখিত লক্ষণ, চিকিৎসা এবং সতর্কতাগুলি অনুসরণ করলে রোগটি দ্রুত শনাক্ত এবং উপযুক্ত চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ:
জ্বর: ১০১-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট
শরীরব্যথা এবং তীব্র মাথাব্যথা
চোখব্যথা এবং চোখ লাল হয়ে যাওয়া
ক্ষুধামান্দ্য, বমি বমি ভাব, বমি করা
গলাব্যথা, কাশি
র্যাশ দেখা দেওয়া
ডেঙ্গু হেমোরেজ: রক্তপাত, তীব্র পেটব্যথা, পাতলা পায়খানা, বমি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি
কেন সচেতনতা প্রয়োজন?
ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত সাত দিনের মধ্যে সেরে যায়, তবে জ্বর শেষ হওয়ার ২৮-৪৮ ঘণ্টা পর রোগীর অবস্থার মারাত্মক অবনতি হতে পারে। সেসময় রক্তচাপ কমে যেতে পারে এবং নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। এই সময়টিতে উপযুক্ত চিকিৎসা না নেওয়া হলে জীবনসংকট সৃষ্টি হতে পারে, যেমন:
ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (রক্তচাপ খুব কমে যাওয়া)
ডেঙ্গু হেমোরেজ (রক্তক্ষরণ)
প্লাজমা লিকেজ (রক্তনালি থেকে জলীয় অংশ বের হয়ে যাওয়া)
পরীক্ষা:
CBC এবং NS1 Ag Antigen Test (জ্বরের একদিন পর)
CBC, Anti Dengue Antibody IgG এবং IgM Test (জ্বরের ৪-৫ দিন পর)
রোগীর করণীয়:
বিশ্রাম নিন
প্যারাসিটামল ব্যবহার করুন জ্বর কমানোর জন্য
পর্যাপ্ত তরল খাবার (স্যুপ, ডাব, ফলের জুস, দুধ) পান করুন
রক্তচাপ নিয়মিত পরিমাপ করুন
CBC Test নিয়মিত করুন
হাসপাতালে ভর্তি প্রয়োজন:
তীব্র পেটব্যথা, ঘন ঘন বমি
পেটে বা বুকে পানি জমে যাওয়া
ব্লিডিং বা রক্তক্ষরণ
প্লাটিলেট কমে গিয়ে ৫০,০০০ এর নিচে চলে গেলে
প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে
নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে যেতে হবে:
ডেঙ্গু শক সিনড্রোম
শ্বাসকষ্ট বা শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা
লিভার, ব্রেইন, হার্ট, কিডনির জটিলতা
তীব্র ব্লিডিং (রক্তপাত)
কিছু সতর্কতা:
অযথা আতঙ্কিত হবেন না
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করুন
ব্যথানাশক (Painkiller) ওষুধ ব্যবহার করবেন না
স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ ব্যবহার করবেন না
অতিরিক্ত তরল খাবেন না
প্লাটিলেট নিয়ে আতঙ্কিত হবেন না, কারণ তা এক-দুই দিনের মধ্যে বাড়তে শুরু করে
বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে:
অন্তঃসত্ত্বা নারী
শিশু-কিশোর এবং বয়সী ব্যক্তিরা
ডায়াবেটিস বা অন্যান্য ক্রনিক রোগে আক্রান্ত রোগী
এটি একটি গুরুতর রোগ, এবং যেহেতু সঠিক চিকিৎসা পাওয়ার মাধ্যমে ডেঙ্গুর সংকটকাল নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাই নির্দিষ্ট লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।